ঢাকা ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়ার ছবি দিলে কি অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতা হারিয়ে ফেলতো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৩৯:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ ২০২১
  • ১৩৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিএনপির বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যানারে দলীয় চেয়ারপারন খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা নিয়ে যে ব্যাখ্যা আয়োজকরা দিয়েছেন তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।
তিনি মনে করেন, সার্বজনীনতার দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়ার ছবি ব্যানারে না দিয়ে তাকে হেয় করেছে আয়োজক কমিটি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, জিয়াকে যারা মানেন, তাদের কাছে কি খালেদা জিয়া অগ্রহণযোগ্য?
তিনি বলেন, কেবল খালেদা জিয়ার নাম বা ছবি দিলেই অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতা হারিয়ে ফেলতো, এমন কথা ম্যাডামের প্রতি খুবই অবজ্ঞাসূচক ও অসৌজন্যমূলক। এ ধরণের দুঃখজনক উক্তি করা উচিত হয়নি।
বিএনপির চেয়ারপাসনের প্রেস সচিব আরও বলেন, আমি খুব বেদনার সঙ্গে বলতে চাই, রাজনীতিতে উদারতা খুব ভালো, কিন্তু নতজানুতা নয়। প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখে ছাড় দিয়ে নিজের নেতা-নেত্রীকে ছোটো করে সার্বজনীন হবার চেষ্টার নাম রাজনীতি নয়, আত্মসমর্পণ। তিনি নিজ দলের নেতাদের আত্মসমর্পণ ও আত্মবিনাশের এ পথ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন মারুফ কামাল খান।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে গৃহীত বছরব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।  কিন্তু উদ্বোধনীর ব্যানারে দলের চেয়ারপারসনের ছবি না থাকায় নেতাকর্মীরা অবাক হন। এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

এমনকি ব্যানারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানেও দলীয় নেতাকর্মীরা আয়োজক কমিটির কঠোর সমালোচনা করেন।
পরদিন মঙ্গলবার ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে যুগান্তরের কাছে ব্যাখ্যা দেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে শুধু জিয়াকে ফোকাস করতে চেয়েছি। এ কারণে দলীয় চেয়ারপারসনের ছবি ব্যবহার করা হয়নি। তা ছাড়া এ কর্মসূচিটাকে আমরা সর্বজনীন করতে চেয়েছি, দলীয় নয়। এ কারণে জিয়ার ছবি ব্যবহার করেছি।
তবে আবদুস সালামের এ ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বুধবার ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসটি যুগান্তর পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘যাক, তবু কেউ একজন দায় স্বীকার করেছেন। ভুল স্বীকার না করলেও আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু একটা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার বছরব্যাপী যে-সব কর্মসূচি বিএনপি নিয়েছে, সেই কর্মসূচিমালার উদ্বোধন করা হয় পয়লা মার্চ নগরীর লেকশোর হোটেলে। সে অনুষ্ঠানের ব্যানারে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নাম বা ছবি কোনোটাই ছিল না।

এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্নের সঞ্চার হয়। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ জানতে চান। জানতে চান, এটা কি নিছক ভুল নাকি পরিকল্পিত কোনো চক্রান্ত?

এটাই স্বাভাবিক। কারণ সেই তথাকথিত এক-এগারোর ট্রমা থেকে বিএনপি এবং এই দলের নেতা-কর্মীরা আজো মুক্ত হতে পারেনি। ওই আঘাত বিএনপিকে যেভাবে পঙ্গু করেছে, সেই পঙ্গুত্ব নিয়ে আজও খুঁড়িয়ে চলছে দল।

সেই আঘাত এসেছিল দলের বড় বড় নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের কাপুরুষোচিত ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতায়। সেটা ছিল বিএনপির নেতৃত্ব থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে জোর করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা। সেটা শেষ অব্দি ব্যর্থ হলেও দল ও নেতৃত্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

সেই ষড়যন্ত্রের যারা দোসর হয়েছিলেন, তাদের প্রায় সকলকেই ক্ষমা করে ফিরিয়ে নিয়েছেন ম্যাডাম জিয়া। কিন্তু ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়, তেমনই বিএনপির নিবেদিত নেতা-কর্মীরা সব সময় বাইরের আক্রমণের পাশাপাশি ভেতরকার ষড়যন্ত্রের ব্যাপারেও আতঙ্কে থাকেন।

ম্যাডাম জিয়ার ছবি-নাম কিছুই ব্যানারে নেই দেখে তাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও শংকিত হয়েছেন। তাদের সেই শংকা ও ক্ষোভ তারা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, ম্যাডামকে নেতৃত্ব, দল ও রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন মহল ও সীমান্তের বাইরের শক্তির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভেতর থেকে কেউ ফের চক্রান্তের দোসর হয়েছে কিনা!

সে ক্ষোভের কথা বিভিন্ন মিডিয়ায়ও এসেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমি নিজেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। অবশেষে জানলাম, বিএনপির উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, ভুলে নয়, ভেবে-চিন্তেই এটা করেছেন তারা।

আব্দুস সালামের সঙ্গে আমার বন্ধুসুলভ ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু, আই অ্যাম স্যরি! আমি সালাম সাহেবের দেয়া কৈফিয়ৎ বিভিন্ন পত্রিকায় পড়লাম, তবে তাতে কনভিন্স হতে পারলাম না।

তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানটিকে দলীয় গণ্ডিতে না রেখে ‘সার্বজনীন’ করার লক্ষ্যেই নাকি খালেদা জিয়ার ছবি ব্যানারে না রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

অনুষ্ঠানটি দল হিসেবে বিএনপির। সেটার দলীয় পরিচয় মুছবেন কী করে? আর সার্বজনীন মানে কী? শহীদ জিয়াকে যারা মানেন, তাদের কাছে-কি খালেদা জিয়া অগ্রহনযোগ্য? যারা অনুষ্ঠানে এসেছেন, তারা খালেদা জিয়ার ছবি থাকলে কি আসতেন না? আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও অন্য নেতাদেরকেও এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তারা।

সালাম সাহেবের বক্তব্যে মনে হলো, আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে অনুষ্ঠানটিকে গ্রহনযোগ্য করার লক্ষ্যেই হয়তো তারা ‘সার্বজনীন’ এ ব্যানার বানাবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তো কেউ এলেন না। তাতে প্রমাণ হলো, সার্বজনীনতার এ ভুল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মধ্যে থেকে দলের নিবেদিত নেতা ও কর্মীরা কেবল মর্মবেদনার শিকার হলেন।

খালেদা জিয়ার ছবি এড়িয়ে শুধু জিয়াউর রহমানকে হাইলাইট করার যে যুক্তি সালাম সাহেব দিয়েছেন তা মানলেও প্রশ্ন থাকে, ব্যানারে নামটাও কেন দিলেন না তাঁর? ব্যানারে তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমনকি সালাম সাহেবের নিজের নামও তো ছিল!

বিএনপির সব অনুষ্ঠানের ব্যানারে যে ছবিগুলো থাকা নিয়মে পরিণত হয়েছে সে রেওয়াজ ভাঙলেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ম্যাডামের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মঞ্চে একটি আসন খালি রাখার প্রথাটাও মানলেন না। এতে নেতা-কর্মীদের মন খারাপ হবেই। তারা সন্দেহ করবেই। ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন তুলবেই। কাজেই এই সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে সেটা স্বীকার করে নিলেই ভালো হতো। দলের জন্য এবং তাদের নিজেদের জন্যও হতো মঙ্গলজনক।

যে অনুষ্ঠান বিএনপির অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান উদ্বোধন করেন, যে মঞ্চে বিশেষ অতিথি হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সভাপতিত্ব করেন ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন আব্দুস সালাম, সেই অনুষ্ঠানকে দলীয় পরিচয় মুছে তথাকথিত ‘সার্বজনীন’ করার আশা খুবই দুরাশা ছিল। উনারা সকলে সার্বজনীন কিন্তু কেবল খালেদা জিয়ার নাম বা ছবি দিলেই অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতা হারিয়ে ফেলতো, এমন কথা ম্যাডামের প্রতি খুবই অবজ্ঞাসূচক ও অসৌজন্যমূলক। এ ধরণের দুঃখজনক উক্তি করা উচিত হয়নি।

আমি খুব বেদনার সঙ্গে বলতে চাই, রাজনীতিতে উদারতা খুব ভালো, কিন্তু নতজানুতা নয়। প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখে ছাড় দিয়ে নিজের নেতা-নেত্রীকে ছোটো করে সার্বজনীন হবার চেষ্টার নাম রাজনীতি নয়, আত্মসমর্পণ। প্রিয় নেতারা, দয়া করে আত্মসমর্পণ ও আত্মবিনাশের এ পথ ছাড়ুন।
এ মহাদুর্যোগকালে বিলাসবহুল হোটেলে আয়োজিত আপনাদের এই জাঁকালো আয়োজনে স্বাধীনতাযুদ্ধে খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও অবদানের কথা একবারও উচ্চারণ করলেন না। অথচ তিনি ছিলেন স্বাধীনতার আলোচিত বন্দী। তারেক রহমান ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধকালের অন্যতম এক কিশোর-বন্দী। একটি বারও বলা হোলো না এই কথাগুলো। এসব গৌরবগাথা উচ্চারণ না করে প্রতিপক্ষের নিন্দার ভয়ে সার্বজনীন হবার আশায় নিজেদের নেতা-নেত্রীকেই ছেঁটে ফেলা দুঃখজনক, খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
আবারো বলি, সতর্ক হোন, সচেতন হোন দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক শক্তি। হুঁশিয়ার থাকুন প্রতিটি নেতা-কর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খালেদা জিয়ার ছবি দিলে কি অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতা হারিয়ে ফেলতো

আপডেট টাইম : ০১:৩৯:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিএনপির বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যানারে দলীয় চেয়ারপারন খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা নিয়ে যে ব্যাখ্যা আয়োজকরা দিয়েছেন তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।
তিনি মনে করেন, সার্বজনীনতার দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়ার ছবি ব্যানারে না দিয়ে তাকে হেয় করেছে আয়োজক কমিটি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, জিয়াকে যারা মানেন, তাদের কাছে কি খালেদা জিয়া অগ্রহণযোগ্য?
তিনি বলেন, কেবল খালেদা জিয়ার নাম বা ছবি দিলেই অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতা হারিয়ে ফেলতো, এমন কথা ম্যাডামের প্রতি খুবই অবজ্ঞাসূচক ও অসৌজন্যমূলক। এ ধরণের দুঃখজনক উক্তি করা উচিত হয়নি।
বিএনপির চেয়ারপাসনের প্রেস সচিব আরও বলেন, আমি খুব বেদনার সঙ্গে বলতে চাই, রাজনীতিতে উদারতা খুব ভালো, কিন্তু নতজানুতা নয়। প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখে ছাড় দিয়ে নিজের নেতা-নেত্রীকে ছোটো করে সার্বজনীন হবার চেষ্টার নাম রাজনীতি নয়, আত্মসমর্পণ। তিনি নিজ দলের নেতাদের আত্মসমর্পণ ও আত্মবিনাশের এ পথ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন মারুফ কামাল খান।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে গৃহীত বছরব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।  কিন্তু উদ্বোধনীর ব্যানারে দলের চেয়ারপারসনের ছবি না থাকায় নেতাকর্মীরা অবাক হন। এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

এমনকি ব্যানারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানেও দলীয় নেতাকর্মীরা আয়োজক কমিটির কঠোর সমালোচনা করেন।
পরদিন মঙ্গলবার ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে যুগান্তরের কাছে ব্যাখ্যা দেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে শুধু জিয়াকে ফোকাস করতে চেয়েছি। এ কারণে দলীয় চেয়ারপারসনের ছবি ব্যবহার করা হয়নি। তা ছাড়া এ কর্মসূচিটাকে আমরা সর্বজনীন করতে চেয়েছি, দলীয় নয়। এ কারণে জিয়ার ছবি ব্যবহার করেছি।
তবে আবদুস সালামের এ ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বুধবার ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসটি যুগান্তর পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘যাক, তবু কেউ একজন দায় স্বীকার করেছেন। ভুল স্বীকার না করলেও আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু একটা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার বছরব্যাপী যে-সব কর্মসূচি বিএনপি নিয়েছে, সেই কর্মসূচিমালার উদ্বোধন করা হয় পয়লা মার্চ নগরীর লেকশোর হোটেলে। সে অনুষ্ঠানের ব্যানারে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নাম বা ছবি কোনোটাই ছিল না।

এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্নের সঞ্চার হয়। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ জানতে চান। জানতে চান, এটা কি নিছক ভুল নাকি পরিকল্পিত কোনো চক্রান্ত?

এটাই স্বাভাবিক। কারণ সেই তথাকথিত এক-এগারোর ট্রমা থেকে বিএনপি এবং এই দলের নেতা-কর্মীরা আজো মুক্ত হতে পারেনি। ওই আঘাত বিএনপিকে যেভাবে পঙ্গু করেছে, সেই পঙ্গুত্ব নিয়ে আজও খুঁড়িয়ে চলছে দল।

সেই আঘাত এসেছিল দলের বড় বড় নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের কাপুরুষোচিত ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতায়। সেটা ছিল বিএনপির নেতৃত্ব থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে জোর করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা। সেটা শেষ অব্দি ব্যর্থ হলেও দল ও নেতৃত্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

সেই ষড়যন্ত্রের যারা দোসর হয়েছিলেন, তাদের প্রায় সকলকেই ক্ষমা করে ফিরিয়ে নিয়েছেন ম্যাডাম জিয়া। কিন্তু ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়, তেমনই বিএনপির নিবেদিত নেতা-কর্মীরা সব সময় বাইরের আক্রমণের পাশাপাশি ভেতরকার ষড়যন্ত্রের ব্যাপারেও আতঙ্কে থাকেন।

ম্যাডাম জিয়ার ছবি-নাম কিছুই ব্যানারে নেই দেখে তাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ ও শংকিত হয়েছেন। তাদের সেই শংকা ও ক্ষোভ তারা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, ম্যাডামকে নেতৃত্ব, দল ও রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন মহল ও সীমান্তের বাইরের শক্তির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভেতর থেকে কেউ ফের চক্রান্তের দোসর হয়েছে কিনা!

সে ক্ষোভের কথা বিভিন্ন মিডিয়ায়ও এসেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমি নিজেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। অবশেষে জানলাম, বিএনপির উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, ভুলে নয়, ভেবে-চিন্তেই এটা করেছেন তারা।

আব্দুস সালামের সঙ্গে আমার বন্ধুসুলভ ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু, আই অ্যাম স্যরি! আমি সালাম সাহেবের দেয়া কৈফিয়ৎ বিভিন্ন পত্রিকায় পড়লাম, তবে তাতে কনভিন্স হতে পারলাম না।

তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানটিকে দলীয় গণ্ডিতে না রেখে ‘সার্বজনীন’ করার লক্ষ্যেই নাকি খালেদা জিয়ার ছবি ব্যানারে না রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

অনুষ্ঠানটি দল হিসেবে বিএনপির। সেটার দলীয় পরিচয় মুছবেন কী করে? আর সার্বজনীন মানে কী? শহীদ জিয়াকে যারা মানেন, তাদের কাছে-কি খালেদা জিয়া অগ্রহনযোগ্য? যারা অনুষ্ঠানে এসেছেন, তারা খালেদা জিয়ার ছবি থাকলে কি আসতেন না? আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও অন্য নেতাদেরকেও এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তারা।

সালাম সাহেবের বক্তব্যে মনে হলো, আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে অনুষ্ঠানটিকে গ্রহনযোগ্য করার লক্ষ্যেই হয়তো তারা ‘সার্বজনীন’ এ ব্যানার বানাবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তো কেউ এলেন না। তাতে প্রমাণ হলো, সার্বজনীনতার এ ভুল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মধ্যে থেকে দলের নিবেদিত নেতা ও কর্মীরা কেবল মর্মবেদনার শিকার হলেন।

খালেদা জিয়ার ছবি এড়িয়ে শুধু জিয়াউর রহমানকে হাইলাইট করার যে যুক্তি সালাম সাহেব দিয়েছেন তা মানলেও প্রশ্ন থাকে, ব্যানারে নামটাও কেন দিলেন না তাঁর? ব্যানারে তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমনকি সালাম সাহেবের নিজের নামও তো ছিল!

বিএনপির সব অনুষ্ঠানের ব্যানারে যে ছবিগুলো থাকা নিয়মে পরিণত হয়েছে সে রেওয়াজ ভাঙলেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ম্যাডামের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মঞ্চে একটি আসন খালি রাখার প্রথাটাও মানলেন না। এতে নেতা-কর্মীদের মন খারাপ হবেই। তারা সন্দেহ করবেই। ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন তুলবেই। কাজেই এই সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে সেটা স্বীকার করে নিলেই ভালো হতো। দলের জন্য এবং তাদের নিজেদের জন্যও হতো মঙ্গলজনক।

যে অনুষ্ঠান বিএনপির অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান উদ্বোধন করেন, যে মঞ্চে বিশেষ অতিথি হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সভাপতিত্ব করেন ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন আব্দুস সালাম, সেই অনুষ্ঠানকে দলীয় পরিচয় মুছে তথাকথিত ‘সার্বজনীন’ করার আশা খুবই দুরাশা ছিল। উনারা সকলে সার্বজনীন কিন্তু কেবল খালেদা জিয়ার নাম বা ছবি দিলেই অনুষ্ঠানটি সার্বজনীনতা হারিয়ে ফেলতো, এমন কথা ম্যাডামের প্রতি খুবই অবজ্ঞাসূচক ও অসৌজন্যমূলক। এ ধরণের দুঃখজনক উক্তি করা উচিত হয়নি।

আমি খুব বেদনার সঙ্গে বলতে চাই, রাজনীতিতে উদারতা খুব ভালো, কিন্তু নতজানুতা নয়। প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখে ছাড় দিয়ে নিজের নেতা-নেত্রীকে ছোটো করে সার্বজনীন হবার চেষ্টার নাম রাজনীতি নয়, আত্মসমর্পণ। প্রিয় নেতারা, দয়া করে আত্মসমর্পণ ও আত্মবিনাশের এ পথ ছাড়ুন।
এ মহাদুর্যোগকালে বিলাসবহুল হোটেলে আয়োজিত আপনাদের এই জাঁকালো আয়োজনে স্বাধীনতাযুদ্ধে খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও অবদানের কথা একবারও উচ্চারণ করলেন না। অথচ তিনি ছিলেন স্বাধীনতার আলোচিত বন্দী। তারেক রহমান ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধকালের অন্যতম এক কিশোর-বন্দী। একটি বারও বলা হোলো না এই কথাগুলো। এসব গৌরবগাথা উচ্চারণ না করে প্রতিপক্ষের নিন্দার ভয়ে সার্বজনীন হবার আশায় নিজেদের নেতা-নেত্রীকেই ছেঁটে ফেলা দুঃখজনক, খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
আবারো বলি, সতর্ক হোন, সচেতন হোন দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক শক্তি। হুঁশিয়ার থাকুন প্রতিটি নেতা-কর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী।